খ্রীষ্টে আর কৃষ্ণে অন্য চোখে ?

Sourastra Das
5 min readMar 9, 2021

--

পাঠক দের উদ্দেশ্যে :

লেখার শুরুতেই বলে রাখি ‘ আমার কোন ধর্মে তথা ঈশ্বর আল্লাহ ভগবানে বিশ্বাস নেই। আমার এই লেখা “কোন ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়, কাউকে আঘাত করা নয়। আমার এই লেখা নিয়ে যদি কেউ আহত হয়ে থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য “ ও অনুপ্রেরণা হচ্ছে! ( হ্যান্সম্যান অ্যান্টনি ) বাঅ্যান্টনি ফিরিঙ্গি “ এক নামে সবাই চিনি তাকে যিনি ১৯শতকের প্রথম দিকে বাংলাতে আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের ফরাসডাঙ্গা নামক এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ভালবেসে গান গাইতেন, জাতি ধর্ম বর্ণের উর্ধে উঠে তার গানে মানুষ ও মানবতার কথা পাওয়া যায়। তাঁর জীবন নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত উত্তম কুমার অভিনীত বিখ্যাত চলচ্চিত্র অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এবং ২০১৪ সালে মুক্তি পায় সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত (জাতিস্মর ) এই জাতিস্মর সিনেমায় একটি গান আমাকে খুব চিন্তায় ফেলে দেয়। মনের মধ্য অনেক প্রশ্ন জাগে…..। কি ? সেই গান আমাকে এই লেখাটি লিখতে সাহায্য করলো । সেটা হলো ( খৃষ্ট আর কৃষ্ণে কিছুই ভিন্ন নাইরে ভাই…| শুধু নামের ফেরে মানুষ ফেরে এও কোথা শুনি নাই ) এই গান শোনার পর আমার ভেতর থেকে আলাদাই এক আবেগ তৈরি হয়। তবে আমি যতটা বাইবেল ও গীতা পড়েছি, শ্রী কৃষ্ণ ও যীশু এই দুই ব্যক্তির চিন্তা ধারনা খুব মিল, খুঁজে পেয়েছি কেন মিল আমি জানি না। তবে আমার এই লেখা ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে নয় , বাইবেল ও গীতা থেকে তথ্য সহকারে একটি গল্প খ্রীষ্টে আর কৃষ্ণে অন্য চোখে ।

---------------------------------

🔰 যীশু যেই পিতা তথা ঈশ্বরের কথা বলেছেন তিনি হচ্ছেন শ্রী কৃষ্ণ, অনেক খ্রীষ্টান দাবী করতে পারেন যিশুতো জেরুজালেমের তিনি ভারতের শ্রী কৃষ্ণ সম্পর্কে জানলেন কিভাবে? জেরুজালেমেতো শ্রী কৃষ্ণ সম্পর্কে কেউ জানতো না। কিন্ত আপনি যখন বাইবেল পড়বেন যিশুর বয়স যখন ১২ বছর তার পর থেকে যিশুর জীবনী এক কথায় শূন্য গায়েব । চারটি গসপেলের কোথাও যিশু ১২-২৯ বছর এই জীবনীটা উল্লেখ নেই । আমার প্রশ্ন এই ১৭ বছরের জীবনী কেন বাইবেলে নেই । যিশু এই ১৭ বছর কি করেছেন ?কোথায় ছিলেন তিনি? হঠাৎ ১২ বছর বয়স থেকে কোথায় হারিয়ে গেলেন? আবার হঠাৎ করেই ৩০ বছর বয়স যখন, তখন আবার তাকে হঠাৎ জেরুজালেমে দেখা গেল! আসলে যিশু এই ১৭ বছর তিনি ভারতবর্ষে কাটিয়েছেন, বিভিন্ন ভারতীয় ঐতিহাসিক গন এই কথায় বলেছেন। এবং ভারত থেকেই "শ্রী কৃষ্ণের" ব্যাপারে জেনেছেন। তার পরে ৩০ বছর বয়েসে আবার জেরুজালেমে ফিরে জান। এবং ধর্ম প্রচার করেন।

✝️ যীশু দাবী করেছেন :

One God and Father of all, who is above all, and through all, and in you all.

(Ephesians 4:6 KJV)

অর্থ : সকলের ঈশ্বর ও পিতা এক, তিনি সকলের উপরে, সকলের নিকটে এবং সকলের অন্তরে আছেন।

(ইফিষীয় 4:6 BCV)

যিশু বলেছেন :

Believest thou not that I am in the Father, and the Father in me? the words that I speak unto you I speak not of myself: but the Father that dwelleth in me, he doeth the works.

(
John 14:10 KJV )
অর্থ : তোমরা কি বিশ্বাস করো না যে, আমি পিতার মধ্যে বিরাজ করি এবং পিতা আমার মধ্যে বিরাজ করেন? আমি তোমাদের যা কিছু বলি, তা শুধু আমার নিজের কথা নয়, বরং পিতা, যিনি আমার মধ্যে আছেন, তিনি তাঁর কার্য সম্পাদন করছেন।

( যোহন 14:10 BCV )

যিশু বাইবেলে পদ সমূহতে যে সমস্ত দাবী করেছেন।

  1. ঈশ্বর তিনি সবার পিতা
  2. ঈশ্বর সর্বত্র আছেন ও সবকিছুতে আছেন৷
  3. যিশুর মধ্যে পিতা/ঈশ্বর আছেন।
  4. পিতা/ঈশ্বরের মধ্যে যিশু আছেন।
  5. যীশু যেই সমস্ত কথা বলেন সেগুলো তার কথা নয়। সব পিতার কথা।
  6. যীশু নিজে কোন কাজ করে না সব পিতা করেন।

🕉 শ্রী কৃষ্ণ দাবী করেছেন :

पिताहमस्य जगतो माता धाता पितामह:
वेद्यं पवित्रमोङ्कार ऋक्साम यजुरेव च || 17||

অর্থ: আমিই এই জগতের পিতা, মাতা, ধাতা, পিতামহ, জ্ঞেয় পদর্থসকল, পবিত্র ব্রতসমূহ এবং ওঙ্কার। আমিই ঋক, সাম এবং যজুঃ প্রভৃতি সকল বেদ। (শ্রীমদ্ভগবদ গীতা ৯:১৭)

  1. শ্রী কৃষ্ণ নিজেকে সবার পিতা দাবী করেছেন। এতএব যীশু যেই পিতার কথা বলতেন তিনিই শ্রী কৃষ্ণ সবার পিতা । আর যীশু হলেন শ্রী কৃষ্ণ এর পুত্র।

अहमात्मा गुडाकेश सर्वभूताशयस्थित:
अहमादिश्च मध्यं च भूतानामन्त एव च || 20||

অর্থ: হে গুড়াকেশ, আমি সর্বভূতের অন্তঃকরণে অবস্থিত আত্মা । আমি সকল প্রাণীর আদি, মধ্য ও অন্তে অবস্থিত । (শ্রীমদ্ভগবদ গীতা ১০:২০)

2. শ্রী কৃষ্ণ সবার মধ্যে আছেন। যিশু বলেছেন তিনিই ঈশ্বর যিনি সবার মধ্যে থাকেন। এতএব যিশু যেই পিতার কথা বলেছেন। তিনিই শ্রী কৃষ্ণ সনাতনীদের ভগবান আর যীশু হলেন শ্রী কৃষ্ণ এর পুত্র।

यो यो यां यां तनुं भक्त: श्रद्धयार्चितुमिच्छति |
तस्य तस्याचलां श्रद्धां तामेव विदधाम्यहम् || 21||

অর্থ : যে ভক্ত যে দেবতার পূজা ভক্তিযুক্ত হয়ে করেন, আমি সেই দেবতাতেই তাঁর ভক্তি দৃঢ় করে দিই ( শ্রীমদ্ভগবদ গীতা ৭:২১)

तेषामेवानुकम्पार्थमहमज्ञानजं तम: |
नाशयाम्यात्मभावस्थो ज्ञानदीपेन भास्वता || 11||

অর্থ : আমি অনুকম্পাবশে তাঁদের আত্মভাবস্থ হয়ে জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোকে অজ্ঞানরূপ অন্ধকারকে নাশ করে থাকি ।

(শ্রীমদ্ভগবদ গীতা ১০:১১)

শ্রী কৃষ্ণ বলছেন যেই কেও পুত্রের পূজা তথা ভক্তি করে সে মূলত শ্রী কৃষ্ণ এর ভক্তি করে। এবং শ্রী কৃষ্ণ তথা পিতা তাকে পরিত্রান দেয়।

যীশু বলেছেন :

That all men should honour the Son, even as they honour the Father. He that honoureth not the Son honoureth not the Father which hath sent him.

( John 5:23 KJV )

যেন তারা যেমন পিতাকে সম্মান করে, তেমনই সকলে পুত্রকেও সম্মান করে। যে ব্যক্তি পুত্রকে সম্মান করে না, সে সেই পিতাকেও সম্মান করে না, যিনি তাঁকে প্রেরণ করেছেন।

( যোহন 5:23 BCV )

3. যিশুর দাবী অনুসারে খ্রীষ্টানদের উচিৎ আগে পিতার তথা শ্রী কৃষ্ণ এর প্রতি ভক্তি উপাসনা করা। কারণ পিতাকে তথা শ্রী কৃষ্ণকে ভক্তি না করলে পুত্র তথা যিশুকে ভক্তি/সন্মান করা হবে না।

প্রথম কথা : দাবী করলেই কি সব কিছু সত্য হয়ে যায় খ্রীষ্টানদের কাছে (?) দাবী করাই যদি সত্য হয় যায় খ্রীষ্টানদের কাছে। তাহলে যেনে রাখুন "শ্রী কৃষ্ণ" একিই দাবী করেছেন তাহলে শ্রী কৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসাবে গ্রহণ করুণ । কেন কৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে দাবী করেছেন না!

আসুন দেখি শ্রী কৃষ্ণ এবং যীশুর হুবহু একই দাবী সমূহ।

শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন :

सर्गाणामादिरन्तश्च मध्यं चैवाहमर्जुन |
अध्यात्मविद्या विद्यानां वाद: प्रवदतामहम् || 32||

অর্থ: হে অর্জুন, সকল পদার্থের আদি, মধ্য ও অন্ত আমি। আমি বিদ্যামাধ্যে অধ্যাত্মবিদ্যা, তার্কিকগণেতে আমি তর্কবিদ্যা।

(শ্রীমদ্ভগবদ গীতা ১০:৩২)

যীশুর একিই দাবী

And when I saw him, I fell at his feet as dead. And he laid his right hand upon me, saying unto me, Fear not; I am the first and the last:

( Revelation 1:17 KJV )

অর্থ : তাঁকে দেখামাত্র আমি মৃত মানুষের মতো তাঁর চরণে পতিত হলাম। তখন তিনি তাঁর ডান হাত আমার উপরে রেখে বললেন, “ভয় পেয়ো না, আমিই আদি ও অন্ত। ( প্রকাশিত বাক্য 1:17 BCV )

খ্রীষ্টানদের বলি যিশুতো নিজেকে আদি ও অন্ত দাবী করেছেন। কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ এর দাবী আরো জোরালো তিনি দাবী করেছেন সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে আমি আদি, মধ্য ও অন্ত আমিই। তাহলে শ্রী কৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে গ্রহণ করুন। আমরা বলি বাস্তবতার আলকে শ্রী কৃষ্ণ ও যীশু দুজনের আদি অন্ত দাবী মাত্র। কৃষ্ণ একটা কাল্পনিক চরিত্র মাত্র পুরাণ কথায় কোন ইতিহাস না, কিন্ত যীশু তাও ইতিহাস বাস্তব কিন্ত এদের দুইজনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে। দুইজনের মৃত্যু ঘটেছে যেটা খুব হাস্যকর আমার কাছে, গীতা বা বাইবেল মিল দেখে আমি অবাক হলেও আরো বলে রাখি পাঠকদের উদ্দেশ্যে ? পৃথিবীর যত ( ইউরেশিয়ান ধর্ম ) গুলির খুব মিল, আর্য জাতি নিজেদের অস্তিত্ব বেদ - গীতা, কোরআন, বাইবেল, আবেস্তা - জেন্দাবেস্তা ইত্যাদি। ধর্মীয় শাস্ত্রের অনেক মিল খুঁজে পাবেন। তবে মিল পাবেন না, ( ট্রাইবাল ধর্ম ) গুলিতে” কিছু মিল পাবেন সেটা বলি প্রথা বা উৎসর্গ (উপাসনা) তবে ধার্মিকদের মধ্যে একটা মিল খুব সুন্দর ধর্ম গ্রন্থ ও ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে নিজেদের ধর্মীয় ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে হাজার বছর ধরে।

তথ্য সূত্র:

  1. বাইবেল https://biblehub.com/genesis/1-1.htm
  2. গীতা https://www.holy-bhagavad-gita.org/chapter/1/verse/1

--

--

Sourastra Das
Sourastra Das

Written by Sourastra Das

Indian rationalist atheist Journalist photographer

No responses yet